জীবন থাকতে দেশকে বিদেশি কর্তৃত্ব ও দেশীয় স্বৈরাচারের হাতে ছেড়ে দিবো না এবং ধর্ষণ-সন্ত্রাস-দুর্নীতি নির্মূল করতে ছাত্রসমাজকেই রুখে দাঁড়াতে হবে
রফিউর রাব্বি বলেন, বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন খারাপ সময় চলছে। গুম-খুন-নির্যাতন বাড়ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কোনো সেবা ঠিকঠাক পাওয়া যাচ্ছে না। ছাত্রদের সংগঠিত ভূমিকা অতীতে পট পরিবর্তন ঘটিয়েছে অদূর ভবিষ্যতের তাই হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
ফিরোজ আহমেদ বলেন, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতি, বাজার দখল সহ বহুদিন থেকে বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্য ও আগ্রাসন চলে আসছে। শাসকগোষ্ঠীর নতজনু পররাষ্ট্রনীতির কারণে তা বেড়েই চলেছে। চলতি অক্টোবরে যে সমস্ত চুক্তি হয়েছে তাতে বাংংলাদেশের জনগণের কোনো সম্মতি ছিল না। হতাশ হবার অনেক কারণ আছে কিন্তু আশাবাদী হবার জন্য সবচে বেশি উপযুক্ত সময় এখন কারণ বাংলাদেশে এই মুহূর্তে তরুণদের সংখ্যা কয়েক কোটি। তরুণরাই কালে কালে পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেপণ। বর্তমান তরুণরাও তাই করবে এটাই পুরো জাতি আশা করে।
গোলাম মোস্তফা বলেন, অপরাধ তৈরির প্রক্রিয়া গুড়িয়ে না দিয়ে কিছু অপরাধীর বিচার করে সরকার তার দুঃশাসনকে আড়াল করতে চায়। হাইব্রীড তত্ত্ব প্রচার করে সরকার তার লোকজনের দুর্নীতি ও সন্ত্রাস আড়াল করতে চায় কিন্তু দেশের মানুষ ভালভাবেই বুঝছেন যে কারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে। কারা ব্যাং লুট করে, প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে। সুতরাং দুর্নীতিবাজদেরকে নির্মূল করতে ছাত্রসমাজকেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। শপথ পাঠের সময় তিনি বলেন, একজন সুনাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের সংহতি ও ঐক্য বজায় রাখতে এবং দেশের সকল পরিস্থিতিতে নিজেকে সচেষ্ট রাখবো। এদেশের জনগণ সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচারের যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য সর্বদা নিয়োজিত থাকবো। এমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকবো যেখানে প্রতিটি শিশুই ছাত্র হবে। মানুষের জন্য সৃষ্টি ও চর্চার সুযোগ থাকবে অবারিত। যারা তরুণদেরকে সমাজের উপকারী সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার বদলে পরিকল্পিতভাবে বেকারত্বের দুষ্টু চক্রের ভিতরে ভবিষ্যতকে অনিশ্চিত রেখে তরুণদেরকে হুকুমের দাস, চোখ থাকতে অন্ধ অথবা সহমত ভাই হিসেবে গড়ে তুলতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সর্বদা নৈতিক লড়াই জারি রাখবো। শহীদ আবরার, সোহাগী জাহান তনু, হাফিজুর মোল্লা, আবু বকরের মতো অসংখ্য মৃত ছাত্রের হৃদয় ছুয়ে শপথ, এই দেশের মাটি ও বাতাস গ্রহণ করে শৈশব ও কৈশোরের হৃদয় মুকুল বিকশিত হয়েছে, জীবন থাকতে দেশকে কোনো বিদেশি কর্তৃত্ব ও দেশীয় স্বৈরাচারের হাতে ছেড়ে দিবো না। সন্ত্রাস-দুর্নীতি-দখলদারিত্ব-খুন-ধর্ষণের মতো সকল বর্বরতার বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠ প্রতিবাদে সোচ্চার থাকবে। স্বৈরাচারী দুঃশাসন নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক।
শুভ দেব বলেন, সারাদেশটাই আজকে বুয়েটের চর্টার সেল ২০১০ নং রুম হয়ে গেছে। প্রত্যেক মানুষ জীবনযাপন ও চলাফেরায় অনিরাপদ বোধ করছেন।
ফাতেমা রহমান বিথী বলেন, পাহাড় থেকে সমতল সর্বত্র নারী-পুরুষ সকলের মানবিক ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দিতে সরকার ব্যর্থ। জনগণের সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে সবার জন্য নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে আবু রায়হান খান বলেন, আমরা আর কোনো আবরার, আবু বকর দেখতে চাই না। টর্চার সেল কিংবা গেস্টরুম নির্যাতনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। যেখানেই নিপীড়ন হবে ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে সেই সন্ত্রাস-নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
২৮ অক্টোবর ২০১৯, সোমবার, বেলা ১২ টায় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিভাগের আয়োজনে সমবেত কণ্ঠে সন্ত্রাস-দুর্নীতি ও ধর্ষণবিরোধী ছাত্র সমাবেশ ও শপথ গ্রহণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদক্ষিণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু রায়হান খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফিরোজ আহমেদ, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, নারায়ণগঞ্জ জেলার সভপতি শুভ দেব, টাঙ্গাইল জেলার আহ্বায়ক ফাতেমা রহমান বিথীসহ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক সৈকত আরিফ। সমাবেশে উপস্থিত সকলকে নিয়ে সন্ত্রাস-দুর্নীতি ও ধর্ষণবিরোধী শপথ পাঠ করেন ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, সহ-সাধারণ সম্পাদক উম্মে হাবিবা বেনজির, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিক রেজা, মশিউর রহমান খধন রিচার্ড, দপ্তর সম্পাদক এম এইচ রিয়াদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সালমান ফরাজী, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, বাংলাদেশ বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতির সহসভাপতি বেলায়েত সিকদার, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবুসহ প্রমুখ ব্যক্তিগণ।